ঢাকা   শুক্রবার , ১৪ মার্চ ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৩ রমজান ১৪৪৬

প্রকাশিত: ২২:৫৩, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

লিবিয়া উপকূলে মৃত্যুর খব‌রে মাদারীপুরের ১০ প‌রিবা‌রে শো‌কের মাতম

প্রকাশিত : ২২:৫৩, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

লিবিয়া উপকূলে মৃত্যুর খব‌রে মাদারীপুরের ১০ প‌রিবা‌রে শো‌কের মাতম

স্বজনদের আহাজারি। ছবি : চ্যানেল 24

অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি যাবার সময় নৌকাডুবিতে নিহত ২৩ জনের মধ্যে ১০ জনের পরিচয় মিলেছে। তাদের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায়। মামা-ভাগ্নে, শালা-দুলাভাইসহ নিহতের পরিবারে চলছে শোকের মাতম। এই ঘটনায় জড়িত দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। পুলিশ বলছে, এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আর নিহতদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে অবৈধভাবে সমুদ্রপথে ইতালি পাড়ি জমাতে গিয়ে একসঙ্গে একই উপজেলার ১০ যুবকের মৃত্যু। এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম। 

স্বজনরা জানান, দালালদের খপ্পরে পড়ে গত ১ জানুয়ারি ইতালির উদ্দেশ্যে বাড়ি ছাড়ে মাদারীপুরের রাজৈর পৌরসভার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের চা বিক্রেতা হাসান হাওলাদারের ছেলে টিটু হাওলাদার। তার সঙ্গে মামা গোবিন্দপুরের বাসিন্দা আবুল বাশার আকনও যোগ দেন। গত ২৪ জানুয়ারি লিবিয়া থেকে একটি ইঞ্জিন চালিত নৌকায় যাত্রা করেন তারা। মাঝপথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারায় মামা আবুল বাশার ও তার ভাগ্নে টিটু। সোমবার সকালে মৃত্যুর খবর আসলে পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া।

এই ঘটনায় মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১০ জনসহ ২৩ জনের লাশ উদ্ধার করে লিবিয়ার কোস্ট গার্ড। ভিটেমাটি বিক্রি করার পাশাপাশি চড়াসুদে টাকা এনে দালালদের হাতে লাখ লাখ টাকা তুলে দিলেও শেষরক্ষা হলো না যুবকদের। এই ঘটনায় মূলহোতা রাজৈর হরিদাসদি গ্রামের স্বপন মাতুব্বর, মজুমদারকান্দি গ্রামের মনির হাওলাদার ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলীপুরের রফিক দালাল। এ ঘটনায় জড়িত দালালদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন স্বজন ও এলাকাবাসী। পাশাপাশি নিহতের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন তারা। দালালদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে পুলিশ। আর নিহতদের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে দূতাবাসের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

থানা পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা নিহতদের পরিচয় হলো, রাজৈর উপজেলার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের চা বিক্রেতা হাসান হাওলাদারের ছেলে টিটু হাওলাদার, গোবিন্দপুরের বাসিন্দা আক্কাস আলী আকনের ছেলে আবুল বাশার আকন, সুন্দিকুড়ি গ্রামের নীল রতন বাড়ৈ, সাগর বাড়ৈ, একই গ্রামের মহেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের ছেলে সাগর বিশ্বাস, গোবিন্দপুরের ফিরোজ শেখের ছেলে ইনসান শেখ ও আশিষ কীর্তনীয়া, বৌলগ্রামের নৃপেন কীর্তনিয়ার ছেলে অমল কীর্তনিয়া, একই গ্রামের চিত্ত সরদারের ছেলে অনুপ সরদার, শাখারপাড় গ্রামের সজিব মোল্লা, সাতবাড়িয়ার রাজীব। সবার বয়স ২০-৩০ বছরের মধ্যে।

নিহত আবুল বাশারের বাবা আক্কাস আলী আকন বলেন, ‘মনির হাওলাদার ও স্বপন মজুমদার এই দুই দালাল ২৮ লাখ নিয়েছে আমার ছেলেকে ইতালি পাঠানোর কথা বলে। কিন্তু আমার ছেলের এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। এই দালালদের কঠোর বিচার চাই।’

টিটু হাওলদারের চাচাতো ভাই রেজাউল হাওলাদার বলেন, ‘দালালে লোভ দেখাইয়া আমার ভাইকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ফেলে দিবে কখনই তা ভাবতে পারিনি। দালালের কঠিন বিচার চাই। আর আমার ভাইয়ের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।’

আরও পড়ুন: হেনস্তার শিকার তরুণী বাড়ি ফিরে নিজেকে শেষ করলেন

মাদারীপুরের রাজৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ খান বলেন, ‘ইতালি যাবার সময় লিবিয়ায় রাজৈর উপজেলার ১০ যুবক মারা গেছে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। নিহতদের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া প্রতিনিয়ত ওয়ারেন্টভুক্ত দালালদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়।’

মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহ্ মোহাম্মদ সজীব বলেন, ‘নিহত ১০ জনের লাশ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে। দূতাবাসের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।’

সারাদিনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করুন চ্যানেল 24 অ্যাপ-

 

এস

আরো পড়ুন