
ছবি: চ্যানেল 24
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার কামারখালীর গড়াই নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন থামানো যাচ্ছে না। আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে উপজেলার মছলন্দপুর বালু মহালসংলগ্ন নদীতে ১৮টি ড্রেজারের মাধ্যমে দিনরাত বালু তোলা হচ্ছে। এতে গড়াই নদীতে বড় ধরনের ভাঙনের আতঙ্কে রয়েছেন নদীতীরবর্তী বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাগুরা জেলার রাজধারপুরের বালুমহালের ইজারাদার মো. আকিদুল মুন্সি দীর্ঘদিন ধরে গড়াই নদীর ফরিদপুর অংশের মছলন্দপুর বালুমহাল থেকে অবৈধভাবে বালু তুলছেন।
গত ১ অক্টোবর উপজেলা প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করায় সেখানে সাময়িকভাবে বালু তোলা বন্ধ ছিল। কিন্তু দু’দিন বাদেই ফের একাধিক ড্রেজার বসিয়ে নদী থেকে দেদার বালু তোলা শুরু করে বালুদস্যুরা। অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে মছলন্দপুর বালুমহালসংলগ্ন এলাকায় তীব্র নদীভাঙনের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। এতে নদীপাড়ের পাকা সড়কসহ কৃষিজমি ও বাড়িঘর নদীতে বিলীন হওয়ার শঙ্কা বাড়ছে। অন্যদিকে ইজারা ছাড়াই মছলন্দপুর বালুমহালসংলগ্ন জায়গা থেকে বালু উত্তোলনে বিপুল রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মধুখালী উপজেলার কামারখালীর গড়াই নদীর ওই অংশ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে নদীতীরবর্তী এলাকার কয়েকটি গ্রাম বিলীন হয়ে যায়। তীব্র ভাঙনে ঝুঁকিতে পড়ে বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ স্মৃতি জাদুঘর এলাকাসহ গন্ধখালী, দয়ারামপুর, গয়েশপুর গ্রামসহ আশপাশের এলাকা। এ অবস্থায় মছলন্দপুর বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ২০১৯ সালে হাইকোর্টে একটি রিট করেন কামারখালী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাহিদুর রহমান বাবু। ওই রিটের শুনানি শেষে আদালত মছলন্দপুর বালুমহাল থেকে বালু উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তবে বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করে স্থানীয় বালুদস্যুরা নির্বিঘ্নে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
সরেজমিন দেখা যায়, মছলন্দপুর বালুমহালসংলগ্ন গড়াই নদীতে ১৮টি ড্রেজারের মাধ্যমে বালু তোলা হচ্ছে। স্থানীয়রা জানালেন, প্রতিদিন নদী থেকে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকার বালু তোলা হচ্ছে। আকিদুল মুন্সি, সৈয়দ আমির আলীসহ কয়েকজন এই বালু তোলায় জড়িত।
আরও পড়ুন: ১১ ঘণ্টা পর খুলনার সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি বছর মাগুরা জেলা রাজধারপুর বালুমহালটি ২ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার টাকায় ইজারা নেন আকিদুল মুন্সি। তিনি রাজধারপুর বালুমহালের সঙ্গে মছলন্দপুর থেকেও অবৈধভাবে বালু তুলছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে আকিদুল মুন্সি বলেন, তিনি মাগুরা জেলার রাজধারপুর বালুমহাল ইজারা নিয়ে সেখান থেকে বালু উত্তোলন করছেন। মছলন্দপুর মহাল থেকে বালু তুলছেন না। এখানে নদীতে একটা সীমানা নির্ধারণের বিষয় রয়েছে। আমি আমার বালুমহালের সীমানা থেকেই বালু তুলছি।
মছলন্দপুর ঘাট থেকে বালু উত্তোলনে প্রশাসনের অভিযানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করে। কারণ বিভিন্ন সময়ে তাদের নামে লোকজন তার কাছে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলেই তারা অভিযান চালায়।
আকিদুল মুন্সি আরও বলেন, ২০২৩ সালে রাজধারপুর বালুমহালটি ৫৬ লাখ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছিল। এ বছর সিন্ডিকেট ভেঙে তিনি ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন। ঘাট ও বালুমহাল ইজারা পেতে তাঁর প্রায় ৫ কোটি টাকা খরচ হয়ে গেছে। এ কারণে প্রতিদিন ৭ লাখ টাকার বালু না তুলতে পারলে ইজারার টাকা উসুল হবে না।
এ বিষয়ে মধুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামনুন রশীদের মোবাইল ফোনে বারবার কল করা হলেও সাড়া না দেয়ায় তার বক্তব্য জানা যায়নি।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লা বলেন, গড়াই নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়ে মধুখালী উপজেলা প্রশাসন নিয়মিতই ব্যবস্থা গ্রহণ করে আসছে। শিগগিরই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সারাদিনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করুন চ্যানেল 24 অ্যাপ-
এসএম