ঢাকা   শুক্রবার , ১৪ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৩ রমজান ১৪৪৬

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
আপডেট: ২০:৫২, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

৩০ বছর পর ফের দেখতে পাচ্ছেন হান্না, শোনালেন নির্মমতার গল্প  

ফিচার ডেস্ক

প্রকাশিত : ২০:৩৪, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ | আপডেট: ২০:৫২, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

৩০ বছর পর ফের দেখতে পাচ্ছেন হান্না, শোনালেন নির্মমতার গল্প  

গত ৩০ বছর ধরে সুন্দর পৃথিবী দু'চোখ ভরে দেখা থেকে বঞ্চিত ছিলেন হান্না মাহদি সালেহ আলি।

গত ৩০ বছর ধরে সুন্দর পৃথিবী দু'চোখ ভরে দেখা থেকে বঞ্চিত ছিলেন হান্না মাহদি সালেহ আলি। তিনি দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার সব আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চোখ পরীক্ষা করাতে বাবাকে সঙ্গে নিয়ে ভিন্ন একটি দেশের চক্ষু হাসপাতালে আসেন তিনি। 'আমি কখনোই ভাবতে পারিনি যে আবারও দেখতে পাব,' বলেন ইয়েমেনে জন্ম নেয়া হান্না। মাত্র ১০ বছর বয়সে তিনি দৃষ্টিশক্তি হারান।

তার বাবা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চক্ষু বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হলেও হানাকে বারবার রাতকানা ও গুরুতর ছানির কারণে স্থায়ী দৃষ্টিহীন রোগী হিসেবে শনাক্ত করা হয়। তিনি কেবল ঝাপসা আলো দেখতে পারতেন, আর প্রতিদিনের সাধারণ কাজ করাও ছিল তার জন্য প্রায় অসম্ভব। হান্নাকে বারবার বলা হয়েছিল, তিনি আর কখনো দেখতে পারবেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আশার আলো দেখা গেছে। খবর খালিজ টাইমসের।

আরও পড়ুন : সুবারা কেন দ্রুত প্রেমে পড়ে এবং পালিয়ে যেতেও দ্বিধা করে না, কী বলে মনোবিজ্ঞান


আশার এক নতুন দিগন্ত: ২০২৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসবাসরত হান্নার এক বোন আবুধাবির মুরফিল্ডস আই হাসপাতালের উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারেন। তিনি বোনকে চোখ পরীক্ষা করানোর জন্য অনুরোধ করেন।
 
আবুধাবিতে পৌঁছানোর পর, হান্না মুরফিল্ডস আই হাসপাতালের পরামর্শক চক্ষুবিশেষজ্ঞ ডা. সৈয়দ এম আসাদ আলির সঙ্গে পরামর্শ করেন।

 বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর হান্নার রোগ নির্ণয় করা হয় গাইরেট অ্যাট্রোফি নামে এক বিরল জিনগত রোগ। এর সঙ্গে ছিল উন্নত পর্যায়ের ছানি এবং সিস্টয়েড ম্যাকুলার ইডিমা। এটি একটি জটিল রোগ ছিল, তবে হান্নার জন্য আশার নতুন সম্ভাবনা দেখা গেল।

'ছোটবেলায় দৃষ্টিশক্তি হারানোর ফলে আমি জীবনের ছোট ছোট অনেক আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়েছি। বাইরে খেলাধুলা করা, বই পড়া, এমনকি স্বাভাবিকভাবে খাওয়াও ছিল কঠিন। কিন্তু হাসপাতাল সম্পর্কে শোনার পর মনে হলো, হয়তো, আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার কোনো উপায় রয়েছে,' বলছিলেন হান্না।

জটিল রোগ ও অস্ত্রোপচার: হান্নার গাইরেট অ্যাট্রোফি রোগটি এক বিরল জিনগত সমস্যা যেখানে অর্নিথিন নামক এক ধরনের তরল পদার্থ শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে জমা হয়। এই রোগ সাধারণত মেডিকেল ইতিহাস, চক্ষু পরীক্ষা, জিনগত পরীক্ষা ও রেটিনা ইমেজিংয়ের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়। 

হান্নার ছানি অপসারণের অস্ত্রোপচার করা হয় আল্ট্রাসাউন্ড প্রযুক্তির মাধ্যমে, যা সুপরিকল্পিত ও নিখুঁতভাবে করতে হয়।

Advertisement

২০২৪ সালের নভেম্বরে হান্নার দুই চোখেই সফল অস্ত্রোপচার করেন ডা. আসাদ আলি। আর এর মধ্যে দিয়ে ৩০ বছরের অন্ধত্বের অবসান ঘটে।
'আমাদের হাসপাতাল লন্ডনের মুরফিল্ডস আই হাসপাতালের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও উত্তরাধিকারকে কাজে লাগিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে উন্নত চক্ষু চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে,' বলেন বিশেষজ্ঞ।
 
'হান্নাকে প্রথমে রেটিনাইটিস পিগমেনটোসা ও জন্মগত ছানি রোগে আক্রান্ত বলা হয়েছিল, তবে পরে আমরা সঠিক রোগ নির্ণয় করি আর তা হলো গাইরেট অ্যাট্রোফি, উন্নত পর্যায়ের ছানি ও সিস্টয়েড ম্যাকুলার ইডিমা। এই রোগগুলো রেটিনায় পরিবর্তন ঘটায় এবং পার্শ্বীয় দৃষ্টিশক্তি হারানোর কারণ হতে পারে,' যোগ করেন ডা. আসাদ আলি।

হান্না তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার পর আবুধাবির চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন যে এটি তার জন্য 'সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ'। ৩০ বছর পর আবার আমি স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি। এতদিন পরও আমার সবকিছু মনে আছে, আমার পরিবারের মুখ, আকাশ, গাছপালা, আর সমুদ্র,' বলেন হান্না।
দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়ার পর তিনি জীবনের প্রতিটি ছোট মুহূর্তকে নতুন করে উপলব্ধি করছেন। বিশ্বকে ফের দেখতে পারার আনন্দ ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়,' বলেন তিনি।
 

সারাদিনের সর্বশেষ খবর পেতে গুগল প্লে স্টোর এবং অ্যাপল অ্যাপ স্টোর থেকে ডাউনলোড করুন চ্যানেল 24 অ্যাপ-

 

এম

    Detail page R1/ ‍adblv&adfinix passbakc

    আরো পড়ুন  

    ×

    Nagad sticky AD